Saturday, January 24, 2009

সিলেটে সাংবাদিক নির্যাতনকারী বিউবোর কোটিপতি বাবলু



সিলেট ব্যুরো | দৈনিক যুগান্তর
দৈনিক যুগান্তর সিলেট ব্যুরোর সিনিয়র রিপোর্টার ও একুশে টিভি’র সিলেট প্রতিনিধি সংগ্রাম সিংহকে অপহরণ করে নির্যাতনকারী বাবলু স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে একজন সহকারী লাইনম্যান। দীর্ঘদিন ধরে মতার অপব্যবহার আর অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে বাবলু এখন কোটিপতি। তার নেতৃত্বে নগরীর চালিবন্দর এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি অপরাধী চক্র। যারা এলাকায় মাদক ব্যবসা ও নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। তাদের মতার দাপটে এলাকার নিরীহ লোকজন প্রতিবাদ করার সাহস পান না। গত শুক্রবার বাবলু ও তার সহযোগী ফাহমি, মাছুম, নাসিম ও শরীফসহ ৫/৬ জন দুর্বৃত্ত সংগ্রাম সিংহকে অপহরণ করে নিয়ে নির্যাতন করে। এ ঘটনার ৫ দিন পরেও তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। বাবলুর লোকজনের ভয়ে বাসায় ফিরতে পারছে না সংগ্রাম সিংহ। ঘটনার পরদিন থেকে প্রতিদিন সংগ্রামের চালিবন্দরস্থ বাসায় গিয়ে বাবলুর লোকজন তাকে খোঁজে থাকে। অভিযোগ উঠেছে, মোটা অংকের টাকায় বাবলু গ্রেফতার এড়াতে পুলিশকে ম্যানেজ করেছে। ফলে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করলেও পুলিশের চোখে সে পলাতক রয়েছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে সাংবাদিক নির্যাতনকারী কোটিপতি লাইনম্যান বাবলুর খুঁটির জোর কোথায়? অথচ বাবলু নিয়মিত সিলেট বিদ্যুৎ বিভাগ-২ এর অধীনে নিয়মিত কাজ করছে। প্রতিদিন খাতায় হাজিরা স্বার দিয়ে স্বাভাবিক করছে বলে বিউবো সূত্রে জানা গেছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট-২ এর তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী বাবলুর পুরো নাম সৈয়দ রেজাউর রহমান বাবলু। সে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানার রামশ্রী সাহেববাড়ির মৃত জিয়াউর রহমানের পুত্র ও সিলেট নগরীর চালিবন্দরস্থ সমতা-১১ নম্বর বাসার বাসিন্দা। বিউবো সূত্র জানায়, বাবলু নিয়মিত অফিসে আসা-যাওয়া করছে এবং খাতায় হাজিরা সার দিয়ে নিয়মিত টিউটি পালন করছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ব্যাপারে সে অফিসকে অবহিত করেনি। নগর বিএনপি’র প্রভাবশালী শ্রমিক নেতা আশফাক আহমদের শ্যালক বাবলু ১৯৮৮ সাল থেকে বিউবো-২ অফিসে লাইনম্যান সহকারী পদে চাকরিতে যোগ দেয়। গত চারদলীয় জোট সরকার আমলে বিএনপি নেতার স্বজন হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে সে। ৫ হাজার টাকা বেতনের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হয়ে বসবাস করছে বিলাসবহুল ভাড়াটে বাসায়। সিলেট-হবিগঞ্জ সড়কে চলমান কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাসের মালিক সে। সিলেট নগরীর চালিবন্দর, ছড়ারপার প্রভৃতি এলাকায় জেনারেটর দিয়ে বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ খাতে সে প্রায় ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে বলে এলাকা সূত্রে জানা গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, লাইনম্যান সহকারী বাবলু বিদ্যুতের লাইনে যান্ত্রিক ত্র“টি সৃষ্টি করে এলাকাবাসীকে ঘন্টার পর ঘন্টা অন্ধকারে রেখে জেনারেটর ব্যবসা জমজমাট করে তুলেছে। জেনারেটরের লাইন টানিয়েছে বিদ্যুৎ লাইনের সরকারি খুঁটির উপর দিয়ে। মাঝে মধ্যে এলাকার হেরোইন সেবীরা জেনারেটরের লাইন কেটে নিলে ওদেরকেও হাত করে নিয়েছে সে। তারই আশ্রয়ে চালিবন্দর শ্মাশানঘাট এলাকায় গড়ে উঠেছে শক্তিশালী মাদক হাট। বিগত জোট সরকারের আমলে ব্যাপক চাঁদাবাজি ও উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সিলেটের শাহী ঈদগাহ থেকে সুরমা নদী পার ও পূর্ব জিন্দাবাজার থেকে বটেশ্বর সেনানিবাস পর্যন্ত বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে বহুতল বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন। এসব ভবনে লাখ লাখ টাকার বিদ্যুৎ ব্যয় হলেও প্রকৃত বিল পায়নি বিদ্যুৎ অফিস। এলাকার আবাসন ও ভূমি ব্যবসায়ীসহ বহুতল ভবনের মালিকগণ বাবলুকে ম্যানেজ করে ফিক্সড বিলের মধ্যে নামকাওয়াস্তে বিল পরিশোধ করেছেন। এেেত্র বাবলু কামাই করেছে লাখ লাখ টাকা। গত জোট সরকারের আমলে বাবলু মতার বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন ছিলেন অতিষ্ঠ। ফিক্সড বিলিং ব্যবস্থা চালু থাকার কথা স্বীকার করেছে বিউবো-২ এর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র। তবে ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে এ ব্যবস্থা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
দৈনিক যুগান্তরের সিলেট ব্যুরো রিপোর্টার ও একুশে টিভি’র সিলেট প্রতিনিধি সংগ্রাম সিংহকে অপহরণ করে নেয় বাবলুর নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত। অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিবের চালিবন্দরস্থ সমতা ৪১/১ বাসায় আটকে রেখে মারধর করে গুরুতর আহত করে। খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা তাকে উদ্ধার করতে গেলে অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব তাদেরকে নানা হুমকি-ধমকি দেন এবং ভুয়া সাংবাদিক আখ্যায়িত করে সংগ্রাম সিংহকে পুলিশে দেয়ার চেষ্টা করেন। পরে সাংবাদিকদের চাপের মুখে সংগ্রাম সিংহকে ছেঁড়ে দিতে বাধ্য হন। এ ঘটনায় সিলেট কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন সাংবাদিক সংগ্রাম সিংহ। মামলা নম্বর-৩৭(১)০৯। মামলার তদন্তভার দেয়া হয় থানার এসআই মোহাম্মদ ইলিয়াসকে। গত সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ সোহেল ও সেলিমকে গ্রেফতার করলেও এজাহারভূক্ত কোন আসামিকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি। ফলে সিলেটের সাংবাদিকসহ সর্বমহলে বিরাজ করছে চরম ােভ। উলেখ মামলার এজাহারভূক্ত ২নং আসামি আহমেদ ওবায়দুর রহমান ফাহমি অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিবের পুত্র ও ঘটনার মূলহোতা বাবলু তাঁর ঘনিষ্ট আত্মীয়। ঘটনার পর থেকে অপহরক চক্রের মূলহোতা বাবলুসহ তার সহযোগী দুর্বৃত্তদের বাঁচাতে তৎপর হয়ে উঠেছে একটি মহল। স্থানীয় সাংবাদিক মহল অবিলম্বে বাবলু ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি তার বিশাল সম্পত্তির তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারা দুদকের প্রতি আহ্বান জানান।

No comments:

Post a Comment